বিজ্ঞাপন দিন

আর কত দূর!! | ইবনে আব্দুস সালাম



ক্ষুদ্র এ জীবন পরিক্রমায় মানুষ কত স্বপ্ন দেখে। আবার কতক স্বপ্নের জাল নিজের অজান্তেই মনের ভিতর বাসা বাঁধে। কিন্তু সব স্বপ্ন তো আর আলোর মুখ দেখতে পায়না, সব স্বপ্ন তো মানুষের মুখে হাসির ঝলক আনতে পারে না। কিছু স্বপ্ন তো পূর্ণ হয়; স্বপ্ন পূরণের অপূর্ব শিহরণ নিয়ে। অপরদিকে কিছু স্বপ্ন; স্বপ্ন-ভঙ্গের বিরহ বেদনা নিয়েই অপেক্ষমান থাকে। এটাই হলো প্রকৃতির শাশ্বত সত্য! এটাই স্বাভাবিক!! কেউ এই ধারা ও নীতিকে অস্বীকার করতে পারবেনা!!!


স্বপ্নের প্রতি আমার কী অপরিসীম আকুতি। প্রতিটি স্বপ্ন যেনো আমার হৃদয়ে বাস্তব হয়, প্রতিটি আশার সোনালী ফসল যেনো ঘরে তোলা সম্ভব হয়। স্বপ্ন দেখা এবং আশায় বুক বাধা, এ-ই তো মানুষের দু’দিনের জীবন।


তেমনি আমার হৃদয়ের মনিকোটায়ও অনেক স্বপ্ন উকি দিয়েছিল, কিছু স্বপ্ন আশার হালকা আভাস নিয়ে উঁকি দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্বপ্ন তো স্বপ্ন-ভঙ্গের জায়গাতেই রয়ে গেছে। আমি দেখতে স্বপ্ন শুরু করেছি সেই শৈশব থেকে, আর অপূর্ণের যন্ত্রনা কিছুটা অনুভব করছি এই কৈশোরে। তবু আমি স্বপ্নের পেখম মেলার আশায় অপেক্ষমান। যে স্বপ্ন আমার মনের ভিতরে সবচেয়ে বড় ঝড়ঝাপটা সৃষ্টি করেছিল এবং এখনও করছে তা ‘বাইতুল্লার মুসাফির’ হওয়ার এক মধুর স্বপ্ন। যা কখনো কখনো আমাকে নিয়ে চলে যায় স্বপ্নের সেই সুদূর জগতে, সেই মরুদেশে, হিজাজে বাইতুল্লাহর সেই সিগ্ধ ছায়া গ্রহণ করতে। কখনো তো আবার চলে যাই শুভ্রকাপড় পরিহিত অবস্থায় মাকামে তাওয়াফে।


কিভাবে যেনো আমি তাদের সঙ্গে একাত্ব হয়ে যাই, কিন্তু বাস্তব জগতে তারা কোথায়, আর আমি কোথায়! তারা, তো দূর হিজাজে মক্কার পথে পথে, মদিনার অলিতে গলিতে আর আমি তো হলাম আজমের উষর ভূমিতে!


তবু হে আল্লাহ! তোমার রহমতের কাছে তো কোনো বাঁধা নেই, প্রতিকূলতাও নেই!! আমার উপায় নেই, উপকরণ নেই, তবু তুমি কবুল করো হে আল্লাহ!!!


যখন এসব কথা ভাবি, মনের ভিতর কেমন যেনো স্বপ্ন পূর্ণ না হওয়ার এক বিরহ বেদনা অনুভূত হয়। কিন্তু যখন নিজের দিকে; নিজের গোনাহের বিশাল দফতরের দিকে তাকাই, তখন মনে হয় আমার মতো নালায়েক ও নাফরমান বান্দা কি কখনো চিন্তা করতে পারে বাইতুল্লাহর ছায়া গ্রহণ করার, বাইতুল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার! আবার যখন মালিকের এহসানের কথা চিন্তা করি, মনে স্বরণ করি রব্বে কারিমের দয়ার কথা। তখন কিভাবে যেনো সান্তনার প্রলেপ হিসেবে আলতো রহমতের বারিধারা আমাকে স্পর্শ করে যায়। নিজেকে তখন বড় ধন্য, বড় সৌভাগ্যশীল আর খোশ-নছিব মনে হয়। মনে হয় যে, অবশ্যই তিনি আমার স্বপ্ন পূর্ণ করবেন, এবং অচিবেই...!


ধীরে ধীরে গত বছর যখন আদীব হুজুর দা.বা. এর ‘বাইতুল্লাহর মুসাাফির’ পড়ার সৌভাগ্য হলো। তখন আমার মনের ভিতর যে তরঙ্গ জোয়ার বয়েছিল, যে অজানা আবেগ ও উদ্দীপনা আমাকে বেষ্টন করে নিয়েছিল তা হয়তো কলমের কালিতে প্রকাশ করা অসম্ভব। যখন পড়তাম, মনের ভিতর অদ্ভুত এক অনুভূতি সৃষ্টি হত। কখনো আবেগের অতিশায্যে...! যত পড়তাম, ততই ভালো লাগত, কল্পনার জগতে মসজিদুল হারামে তাওয়াফ করতাম, দাঁড়িয়ে যমযম পান করে সারা জীবনের তৃষ্ণা নিবারণ করতাম, সাফা-মারওয়ায় ইসমাইল ও মা হাজেরার দৌঁড়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছোটাছুটি করতাম, কিন্তু...।


কিন্তু যখন হুঁশ ফিরে আসত, দেখতাম; না! নিজের জায়গাতেই আছি, আরবে নয়; আমি তো আজমেই আছি। কখনো অদৃশ্য থেকে সান্ত¡না পেতাম, নিরাশ হওয়ার কিছু নেই বান্দা! জীবন তো সবেমাত্র শুরু, অবশ্যই আল্লাহ কবুল করবেন তোমার এই সোনালী স্বপ্নকে। তাই যেন হয় এবং অচিরেই যেন হয়!


এখনো আমি অপেক্ষায় আছি, সেই প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছি। চলো না, মালিকের কাছে প্রথমে চাই স্বপ্নের যন্ত্রনা। পরে যেন স্বপ্ন পূর্ণের সেই আনন্দ দান করেন।


হে আল্লাহ! আমার স্বপ্নের মধুর বেদনাকে উপশম করুন পূর্ণতা দিয়ে। আমাকে কবুল করুন বাইতুল্লাহর মুসাফির হিসেবে। আমীন। ইয়া রব্বাল আলামীন।



মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

নবীনতর পূর্বতন